অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

গুচ্ছ কবিতায় সুব্রত ভৌমিক

 

 

নিশীথের পাখি
=========================


যেদিন তুমি বলেছিলে, আমি পারি।

তুমি জাননি, বজ্রহীন ভাদ্রের বৃষ্টি

কেড়ে নিয়েছিল কত জিওলের জীবন।



কত প্রাণের নাখাওয়া রজনী

প্রাণ ত্যাগের ইচ্ছে জাগিয়েছিল

সভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কদর্যতা।

------------- তা তুমি জাননি।



রাতের আকাশে তারা দেখা ঘুম

সভ্যতার অন্ধকারে--------------

মিছে বাতির আলোতে ডুবা ভিড়।

না, তাও তুমি ভাবনি।



রোদের তাপে পথচলা শিশু

শেষ বেলায় অন্ন অনশনে।

অসহায় নিদ্রায় ক্লান্ত শরীর,

তুলে রাখে অব্যক্ত ব্যথা।

----তা তুমি দেখনি।



ভালোবাসা হীন অনাথ শিশুর

কাতর আবেদনে জাগেনি সমাজ হৃদয়।

খাদ্যের আশায় হারিয়ে গেছে ভালোবাসা,

----- কখনো জানতে চাওনি।



খাদ্য শৃঙ্খলের খাদ্য খাদকের

ব্যথা আর আনন্দের ব্যবধান

বুঝতে চাওনি কখনো।

খাদকের খাদ্য পরিনতি

------তুমি বুঝতে পারনি।



যান্ত্রিক আলোর জীবনে,

আঁধার গলির শূন্যতা

যেদিন ধরা দেবে,

সেদিন হয়তো বলবে----

না আমি সব পারিনি।










শান্তির খোঁজে
========================


আলপথ ধরে আমার হাঁটা,

দেখেছে ফড়িং এর ভালোবাসা।

তার সবুজ রঙে খুঁজে পেয়েছি

অতৃপ্ততার পূর্ণ রসদ।



আঁকাবাঁকা চোখে তোমাকে খুঁজি

পেতে চাই বন্ধ ঘরের সেই বিন্দু।

যেখানে লুকানো ছিল অন্ত:সলিলা।

আর লুকানো প্রজাতির রং।



শিশিরের স্নিগ্ধতা আমাতে ভর,

চলেযায় দিগন্তের পথে।

অশরীরী আত্মার প্রশান্তি

পাশ ফিরে দেখে, তুমি নেই!



পড়ন্ত বিকেল আর ঢেঁকি,

মিলেমিশে যায় আমাতে।

ধান ভানার শব্দে আমার অনুভূতি।

খুঁজে পাই তোমাকে, শান্তির আশায়।



শ্রাবণের কালো মেঘে জমা ব্যথা

বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে একদিন।

সেদিন জলের ধারায় বয়ে যাবে শব্দেরা।

তোমার পৃথিবী আবার শান্ত হবে।



হিংস্রতা
==========================


দিনটি ছিল শনিবার বার রাত।

কিছুক্ষণ আগেই স্বজনরা আমায় মাটি চাপা দিল।

যেটা তোমাদের ভাষায় সমাধিস্থ করা।

ছবির দুই পিঠের অজানা তোরণ

আবদ্ধ করেদিল আমাকে তোমাদের থেকে।

চারদিকে শব্দহীন জোনাকির আলো আর নিস্তব্ধতা।

আমি দেখছিলাম আমার আত্মাহীন দেহ

আর শুনছিলাম আমার স্বজনদের নাথামা কন্নার শব্দ।

নিশুতি রাতের অজস্র শব্দের মাদকাতায়

আমি পেলাম কিছু হাতের ছোঁয়া।

যে হাত গুলো ছিল আমার মাটি চাপায় সহযোগী,

তাদের এই রূপ আমার প্রাণহীন দেহকে

ক্ষতবিক্ষত করে চলছে অনুক্ষণ।

পাতাঝড়া ব্যথায় কাঁদছে আমার অনন্ত ঘুম।

আমার আঁতুড় ঘর আমাকে বলে যাচ্ছে

তুই সৃষ্টির মূল, আর এটাই সৃষ্ট সমাজ।

দীর্ঘশ্বাসের অসীমতায় জেগেছে আগুনের তাপ

আমি অসহায়, হারিয়েগেছে আমার মাতৃত্বের সুখ।

শব্দহীন ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে আত্মার অবিনশ্বরতা।

এখন আর মন কাঁদেছেনা স্বজনের কান্নায়।

শুধু মনে হচ্ছিলো মরে গিয়ে ভালোই হয়েছে

এই অন্ধকার সমাজ থেকে।

আত্মার ব্যথাগুলো হয়তো তোমরা জানবেনা।

চীর কাল তোমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াবো

এই অব্যক্ত যন্ত্রনা নিয়ে।

কাল সকালবেলা হয়তো থানাপুলিশ হবে,

হয়তোবা এই জঙ্গলে আমার প্রাণহীন দেহ

ছিঁড়ে খাবে শেয়াল কুকুর।

নয়তোবা সভ্য সমাজের সভ্যতা রক্ষায়

তথাকথিত বাবুদের চাপে পড়ে

লোক চোখের আড়ালে আবার মাটি চাপা দেবে।







‌আলোকপাত
========================

অভিমান নয়,নেই অভিযোগ

বৃষ্টি ভ্রমের ভাসমানতা।

শুধু বোঝা আর শোনা।

বিভ্রান্তির পতনে অসার,

দিক শূন্য পড়ন্ত দিনে

সাঁতরে নদীর কুলে যাওয়া।

প্রশ্ন চিহ্নের হৃদয়ে

লেগে থাকা কাতার,

আমার শুধু অপেক্ষা।

দূর গ্রামের শঙ্খধ্বনি নৈশকোচে।

শব্দহীন দিনের শেষে

উৎসের সন্ধানে বিবশ।

পরিশ্রবণ পুন:পরিশ্রবণে

নি:শব্দের দোহন,

আলোর উৎস খোঁজা কাল।





আশার দহন
========================



আমি চাইনি কখনো,

বন্যার জলে ভাসা প্রাণীটি

জীবন যুদ্ধের ব্যথা গুলো

আমাকে বলে যাক।



বলে যাক আমায়,

অসহায় রঙের বিচ্ছুরণ ব্যথা।

বাতাসে ভাসা শুস্ক পাতার

পতনের পরিহাস।



বর্ষা জলের উল্লাসে

গুঁড়ি পচনের উদাসীনতায় ,

জেগে থাকা অনুরণন ,

বুঝিনি আমি সে ভুল।



ডানাহীন প্রজাপতির

গমনের শূন্যতা গুলো।

বলেনি তার শব্দহীন ব্যথা,

যাতে লিপ্ত ছিল কালের দহন।



ঝুড়ি ভরা কষ্টের আলিঙ্গন

নির্ঘন্টের আরশিতে।

সময় কালের প্রফুল্লতা

পলাশের লাল রঙে।



শীত বসন্তের ব্যবধানে

অন্তহীন চিন্তার বিকার।

প্রহর পাখির উল্টো সুরে

দিশাহীন ব্রহ্মক্ষণ।



আমি চাইনি কখনো,

সুখের কথা দুহাতে বিদায় নিক।

আমার স্বপ্ন ভঙ্গে,

আমি ঐ পারের যাত্রি।



ঘৃণ্য প্রেম
======================


ভালোবেসে কষ্ট পাওয়াটা

তোমার বোঝার নয়।

রূপের পূজারীর ভিড়

আদিম জীবনে জাগ্রত।



মেঘবৃষ্টির খেলা গুলো

আজ আর ভালো লাগেনা।

ভালো লাগেনা ছন্দহীনতার

মানবিক ফসিল।



বিন্দু জলের তৈরী জলাশয়

হিনমন্যতার শোষণে।

অসার নিস্ফলা মাঠ

আত্মাভিমানে তারা হীন আকাশ।



সে অনেক ভালো ছিলো---

আদিম ভালোবাসা কাল।

ক্ষনিকের তৃপ্ততায় ছিল ----

জ্ঞানহীন জীবনের ভালোলাগা।



ধার করা আলোতে আঁধার উৎসব,

অলোকের অলংকরণ প্রচেষ্টা।

জানান দিয়ে গেল,

আধুনিক রূপে তুমি আদিম পূজারী।



রূপ আর গুণের খেলায়,

বৃ্ক্ষরোপণ উৎসবের

অল্প সময়ের জলদান।

বাহ অন্তরাল পাশবিক আধুনিকতা!



গুণের নামে রূপের পূজা

বোধগম্যতাহীন মাকড়শার জাল।

যেদিন ভাঙ্গবে হয়তো থাকবোনা,

থাকবে ঘৃণার প্রেম।


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন